মুজাম্মিল লতিফি
বিবিএন প্রতিনিধি,কাটিগড়া
আরবি হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। এই মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলে। আশুরা শব্দটি আরবি ‘আশারা’ শব্দ থেকে এসেছে। ‘আশারা’ শব্দের অর্থ হলো দশ। মহররমের দশম দিবসে পালিত হয় বলেই এর নাম আশুরা। কেউ কেউ মনে করেন, এই দিন আল্লাহ তায়ালা দশজন নবীকে সম্মানিত করেছিলেন বলে একে আশুরা নামে অভিহিত করা হয়। আশুরা দিবসটির তাৎপর্য প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। আশুরা দিবসে ঘটেছে ঐতিহ্যময় বহু ঘটনা। যা পৃথিবীর ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যময়। পবিত্র আশুরা দিবসেই হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই দিনে হযরত আদম (আঃ) কে বেহেশতে প্রবেশ করানো হয়েছে। আশুরাতেই আদম(আঃ) কে বেহেশত থেকে দুনিয়ায় প্রেরণ করা হয়েছিল। আদম (আঃ) এর দোয়া কবুল করা হয়েছিল এই আশুরাতেই। মা হাওয়া (আঃ) এর সাথে আদম (আঃ) পুনরায় সাক্ষাৎ হয়েছিল এ দিবসেই। আশুরা দিবসেই আসমান জমিন সৃষ্টি করা হয়েছিল। চাঁদ-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত, সাগর মহাসাগর সৃষ্টি করা হয় এ আশুরাতেই। এই দিন জন্ম গ্রহণ করেন ইব্রাহীম (আঃ)। আশুরাতেই হজরত মূসা (আঃ) এবং আল্লাহ পাকের মধ্যে কথোপ কথন হয়েছিল তূর পর্বতে। হজরত মূসা (আঃ) এর উপর সিনাই পর্বতে তাওরাত কিতাব নাজিল হয়েছিল এই আশুরাতেই। এই দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা চিরকালের জন্য লোহিত সাগরে ডুবিয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন ভ্রান্ত খোদার দাবিদার ফিরাউন ও তার বিশাল বাহিনীকে। হযরত আইয়ুব (আঃ) দীর্ঘ ১৮ বছর কঠিন রোগ ভোগের পর সুস্থ হয়ে উঠেন এই আশুরাতেই। হযরত সোলায়মান (আঃ) পুনঃরাজত্ব লাভ করেন এই আশুরাতেই। হযরত ইসা (আঃ) জন্ম গ্রহণ করেন আশুরাতেই। হযরত ইসা (আঃ) কে আল্লাহপাক স্বশরীরে আসমানে তুলে নেন এই আশুরাতে। আশুরাতে আল্লাহপাক হযরত ইদ্রিস (আঃ) কে জীবিত করেন এবং তাঁকে জান্নাতে উঠিয়ে নেয়া হয়। হযরত নূহ (আঃ) এর জাহাজ চল্লিশ দিন পর পাহাড়ের কিনারে ভিড়ে এই আশুরাতে। আশুরাতেই হযরত নূহ (আঃ) জমিনে অবতরণ করেন। আবার আশুরাতে নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর উম্মতদের গুনাহ মাফ হয়। জিব্রাইল (আঃ) আশুরাতে দুনিয়াতে আগমন করেন। হযরত ইউনুস (আঃ) মাছের পেট থেকে বের হয়ে আসেন আশুরাতে। এই দিবসে ইয়াজিদ বাহিনীর অস্ত্রাঘাতে ইমাম হোসাইন (রাদ্বিঃ) শাহাদত লাভ করেন। ইয়াজিদ পাষন্ডরা সেদিন ইসলামের উপর কলঙ্কজনক ইতিহাস রচনা করেছে। সত্য ও ন্যায়ের অতন্ত্র প্রহরী ইমাম হোসাইন (রাদ্বিঃ) এর পরিবারবর্গ সেদিন ইসলামের জন্য, সত্যের পক্ষে অকাতরে রক্তের সাগর প্রবাহিত করে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার বিজয়ের লক্ষ্যে বীজবপন করেছেন। তাঁদের উৎস্বর্গীকৃত জীবন ইসলামের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়েছে।ত্যাগ চাই মর্সিয় ক্রন্দন নয়। বর্তমানে অনেকের কাছে আশুরা বলতে শুধু কারবালার এ নির্মম ঘটনাকে বোঝায়। এ যেন বিশাল ঢেউয়ের নিচে সাধারণ একটি ঢেউয়ের হারিয়ে যাওয়া। আশুরা দিবসে হুসাইনি চেতনা বহন করার মধ্যে রয়েছে ঈমানি শক্তির উপাদান। অন্যায়ের কাছে নতি স্বীকার না করার শিক্ষা দেয় কারবালার প্রান্তরে নবী দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (রাদ্বিঃ) এর আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হওয়ার ঘটনা। অসত্য, অন্যায়, নির্যাতনের কাছে নতিস্বীকার না করার শিক্ষা দেয় এই আশুরা।
No comments:
Post a Comment