জাতীয় নাগরিক পঞ্জিতে যাঁদের নাম নেই তাঁরা সকলেই ‘অনুপ্রবেশকারী’, এমন কোনওভাবেই বলা চলে না। এন আর সি-র সমন্বয়কারী প্রতীক হাজেলা নিজেই সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, শুধুমাত্র এই তালিকার ভিত্তিতে কাউকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলা চলে না। বি জে পি সভাপতি অমিত শাহ রাজ্যসভার ভেতরে-বাইরে এন আর সি তালিকায় বাদ পড়াদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে অভিহিত করায় তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। হাজেলা বলেছেন, কাউকেই এখন ‘ঘুসপেটিয়া’ বা বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বলা অতিরিক্ত আগ বাড়িয়ে মন্তব্য করা হয়ে যাবে। যাঁদের নাম বাদ পড়েছে তাঁরা পুনরায় আবেদনের সুযোগ পাবেন। তারপরে চূড়ান্ত এন আর সি প্রকাশিত হবে। এমনকি তার পরেও কোনও ব্যক্তি অনুপ্রবেশকারী কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। এই সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা এন আর সি-র নেই। তা বিচারবিভাগীয় পরীক্ষার অধীন। তার জন্য নির্দিষ্ট বিধি রয়েছে। আসামে বিদেশি ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। এন আর সি তালিকারই ভিত্তিতে কাউকে ‘বেআইনি অনুপ্রবেশকারী’ চিহ্নিত করা যাবে না।
একইভাবে প্রশ্নের উত্তরে হাজেলা বলেছেন, যাঁদের নাম নথিভুক্ত হয়েছে তাঁরা কয়েক দফা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু আবেদনের মতো আপত্তি জানানোরও সুযোগ থাকছে। কাউকেই এখনই ‘আইনি নাগরিক’ বা ‘বেআইনি বাসিন্দা’ বলতে হাজেলা রাজি নন।
বস্তুত সুপ্রিম কোর্টও স্পষ্টই জানিয়েছিল, এই খসড়ার ওপরে ভিত্তি করে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। দাবি ও আপত্তি বিবেচনার কাঠামো ও প্রক্রিয়া (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) তৈরি করতে হবে। এই পদ্ধতি আদালতে পেশ করে অনুমোদন করাতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে ভেনুগোপাল বলেছিলেন, এই দাবি ও আবেদন বিবেচনার নানা রকমের মাত্রা থাকবে। তা বিবেচনার জন্য একটি নির্দিষ্ট কাঠামো তৈরির কাজ করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক। এই নিয়মপদ্ধতি তৈরির পরে তা শীর্ষ আদালতে পেশ করা হবে। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি তা পেশ করা যাবে। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশে বলেছে, সকলকেই দাবি পেশের ও তা বিবেচনার ন্যায্য সুযোগ দিতে হবে।
দাবি ও আবেদন পেশের পদ্ধতি সম্পর্কে হাজেলা জানিয়েছেন, যাঁরা বাদ পড়েছেন তাঁরা পুরানো নথিই আরও একবার জমা দিতে পারেন। আর একবার সেই নথি খতিয়ে দেখা হবে, যাতে কোনও প্রকৃত ভারতীয়ের নাম বাদ না পড়ে। বস্তুত তিন ধরনের নথি নিয়ে এই আবেদন জানানো যেতে পারে। এক, সম্পূর্ণ নতুন প্রামাণ্য নথি। দুই, কিছু নতুন কিছু পুরানো নথি। তিন, যা আগেই জমা দিয়েছিলেন সেই নথিই। সবই সমানভাবে খতিয়ে দেখা হবে।
হাজেলা এ কথা বললেও আসামের বিস্তীর্ণ অংশে গভীর উদ্বেগ কাজ করছে। বিশেষ করে গরিব মানুষের মধ্যে। কোনও নথি দিলে কাজ হবে, তা অস্পষ্ট রয়ে গেছে। বাস্তবের মাটিতে এই তালিকা তৈরির সঙ্গে যুক্ত প্রশাসনিক অধিকর্তারা অধিকাংশ নথিই প্রত্যাখ্যান করছেন বলে বিরাট অংশের মানুষের অভিযোগ।
এদিকে, বৃহস্পতিবার আসামের বাম গণতান্ত্রিক মঞ্চের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে নাগরিক পঞ্জি প্রকাশের সময়ে বহু অসংগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ১৯৫১-র এন আর সি অথবা ১৯৭১-র ভোটার তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তি ও তাঁদের সন্তান-পরিজনদের নাম বাদ পড়েছে। একই পরিবারের কারোর নাম রয়েছে, কারোর নাম অকারণে বাদ পড়েছে। ‘লিগ্যাসি নথি’ থাকা সত্ত্বেও বা পঞ্চায়েতের প্রামাণ্য নথি সত্ত্বেও বহু মানুষের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত নথি গ্রাহ্য না হওয়ায় গরিব, নিরক্ষর মহিলা ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ‘ডি’ ভোটারের নামেও বহু মানুষের নাম বাদ পড়েছে। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে এই সমস্ত বিষয়ের নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। নাগরিক পঞ্জি সঠিক ও ভ্রান্তিহীন হতে হবে। তালিকা থেকে বাদ পড়া সকল ব্যক্তির সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার সুরক্ষিত রাখতে হবে।
বাম গণতান্ত্রিক মঞ্চ বলেছে, বি জে পি ধর্মীয় বিভাজন করতে চাইছে। বাদ পড়া ৪০ লক্ষকেই অমিত শাহ যেভাবে ‘বিদেশি’ বলে দিয়েছেন তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
এই মঞ্চে সি পি আই (এম), সি পি আই, সি পি আই (এম এল), জনতা দল (এস), এন সি পি, সমাজবাদী পার্টি, অসম সংগ্রামী মঞ্চ, আম আদমি পার্টি, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, আর সি পি আই, ফরওয়ার্ড ব্লক রয়েছে।
( গণশক্তি)
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment