================================
কবি নজরুলের ভাষায়---- ‘ভিখারীর বেশে খলিফা যাদের -শাসন করিল আধা জাহান, তারা আজ পড়ে ঘুমায় বেহুঁশ - বাইরে বইছে ঝড়-তুফান।’
--- নবী হযরত আদম (আ:) হচ্ছেন মানবজাতির প্রথম ও আদি শিক্ষাগুরু। আর তিনি যে উৎস থেকে জ্ঞান লাভ করেছিলেন তা হচ্ছে ওহি। তারপর দীর্ঘ পথপরিক্রমা.... । এ ধারায় সর্বশেষে আইয়্যামে জাহিলিয়াতের অমানিশার ঘোর অন্ধকার ভেদ করে জন্ম নিলেন জগতের শ্রেষ্ঠতম মানুষ, মহান শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ দার্শনিক, নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (সা:)। সর্বশেষ নবীর পর বিশ্ব জুড়ে ওহি ভিত্তিক শিক্ষার সেই ধারাকে যুগ যুগ ধরে সংরক্ষণ করে আসছে মাদ্রাসা নামক ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি।
আমাদের আসামের ক্ষেত্রে সরকার অনুমোদিত মাদ্রাসাগুলি দীর্ঘ দিন থেকে শুধুমাত্র ইসলামের সেই গুরু দায়িত্ব পালন করে নি বরং উম্মতে মুহাম্মদীকে উপহার দিয়েছে অসংখ্য বিদগ্ধ ইসলামি পন্ডিত । কিন্তু ১৯৯৪ খৃষ্টাব্দে প্রাদেশিকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাদ্রাসাগুলি সম্পূর্ণ সরকারের আওতা ভূক্ত হওয়ার পর থেকে ছাত্র /শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা পাওয়ার মোহ ও সুযোগ সন্ধানী সরকারের হস্তক্ষেপ একদিকে যেভাবে ধাপে ধাপে মাদ্রাসাগুলিকে তার নিজস্ব পরিচিতি থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে অন্যদিকে সাংঘাতিক ভাবে হ্রাস হয়েছে শিক্ষার মান । রাজ্যে সরকারি মাদ্রাসার সংখ্যা ৯ থেকে ৭০০ পার হলেও প্রকৃত আলিম উৎপাদনে মাদ্রাসাগুলির অবস্থান ৯৫ শতাংশ শূন্যের কোঠায় । এদিকে রাজ্যে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মাদ্রাসায় শিক্ষামন্ত্রীর একের পর এক সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও চাকরি খোয়ানোর ভয়ে উলামাদের নিরবতা উম্মতের জন্য এক বড় রেড সিগন্যাল 🔴। কারণ ইসলামী ধর্মতত্ত্বে পাণ্ডিত্যের অধিকারী সিংহভাগ উলামা (আসামের), যারা ক্বওম ও মিল্লতের নেতৃত্বে দেবেন, যারা এই উম্মতের যে কোন সমস্যায় সাহায্যের হাত বাড়ানোর পাশাপাশি বিরোধী পক্ষের প্রতি সিংহের ভূমিকা পালন করার কথা ছিল , তারা আজ ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হারিয়ে অনিচ্ছাকৃত ভাবে সরকারের প্রতিটি সিদ্ধান্তে 'লাব্বায়ীক' বলতে হয়, আর তখনই মুখ তুবড়ে বসে পড়ে অধিকার আদায়ের আন্দোলন ।
বিগত কয়েক দশক থেকে আসামের সরকারী মাদ্রাসা ব্যবস্থা শিক্ষক/ কর্মচারীদের ব্যক্তিগত আর্থিক সমস্যা সমাধানে কিছুটা কাজে আসলেও স্তব্ধ করে দিয়েছে শাহ জালাল মুজার্রাদে এমনীর ইসলামী নবজাগরণকে। শাহ জিয়া উদ্দিন, শাহ বদরুদ্দিন ও শাহ আদম খাকির সহ অসংখ্য উলামা/ আউলীয়াদের এই ক্ষেত্রভূমি ইতিহাসের পাতায় দেওবন্দ/লক্ষ্ণৌ/আজমগড় বা আলিগড়ের সমকক্ষ হওয়ার কথা থাকলেও সরকারী বেতনের আশা সেই স্বপ্ন পূরণ হতে তো দেয় নি বরং ২০১৭ খৃষ্টাব্দেও ৩৫ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত আসামের ছাত্রদেরকে ইসলামী শিক্ষার জন্য উত্তর প্রদেশের মেহমান হতে হয়। এমনকি মওলানা আব্দুল জলিল চৌধুরী, মওলানা ইমদাদুর রহমান (র:) সাহেবদের মত ভারত বিখ্যাত ব্যক্তিদের হাতে গড়া সরকারী মাদ্রাসা গুলিতে আজ অবধি ইফতা, তফসির,ইতিহাস,বা আরবি সাহিত্যের মত ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজনীয় বিভাগের সূচনা করা সম্ভব হয় নি।
যাইহোক, উত্তর পূর্বাঞ্চলের ইসলামী ইতিহাসে আসামের সরকারি মাদ্রাসার ভূমিকা অস্বীকার করার নয়। আজও এই অঞ্চলে ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত ৯০ ভাগ উলামা এইসব সরকারি মাদ্রাসারই দান । যার দরুন এখনও সরকারি মাদ্রাসার প্রতি সাধারণ মুসলমানদের শ্রদ্ধা ও ভরসা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় কিছুটা কম হলেও বরাক উপত্যকায় মোটেই কমে নি। কিন্তু কে জানে! বুক ভরা আশা নিয়ে বাপ দাদার হাতে গড়া এইসব মাদ্রাসা আজ অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার পথে।.......... এই পর্যন্ত কেবলমাত্র বরাক উপত্যকার হাতে গোনা কয়েকটি মাদ্রাসা ছাড়া আসামের সবকটি মাদ্রাসায় সহ-শিক্ষা চালু হয়ে গেছে । আর কিছু দিনের মধ্যে সরকার যখন বিধর্মী শিক্ষক / শিক্ষিকাদের নিয়োগ দেবে (বর্তমানেও রয়েছেন) এবং মাদ্রাসায় মসজিদের সঙ্গে গণেশ মন্দির স্থাপন ও সিরাতুন্নবীর সঙ্গে সরস্বতী অনুষ্ঠান (নাউঝুবিল্লাহ) আয়োজনের ফতোয়া আসবে! আর যখন এসব সিদ্ধান্তে চাকরিজীবী উলামাদেরকে বাধ্যতামূলক ভাবে হাত তুলে সমর্থন করতে হবে তখন তো সাধারণ মানুষের কাছে এমনিতেই উন্মোচিত হয়ে যাবে সরকারি মাদ্রাসার প্রশাসনিক ব্যবস্থা । তাই বোর্ড বাতিল করে সেবার সঙ্গে যুক্ত করার প্রক্রিয়াটি মুসলমানদে প্রতি পরোক্ষভাবে ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করি। কারণ যত আগে জগাখিচুড়ি পাঠ্যক্রমে পরিচালিত এইসব মাদ্রাসার আসল চেহারা জনসমক্ষে আসবে মুসলমানরা ততই তাড়াতাড়ি সচেতন হবে এবং ভবিষ্যতের চিন্থা করবে। তখন ইসলামী সংস্কৃতি রক্ষার্থে মুসলমানরা আবার 'আছহাবে ছুফ্ফা'কেই ক্বিবলা মানবে ।
অতএব মন্ত্রীকে ঘোষ দিয়ে মাদ্রাসা বাচানোর অভিনয়কারী বা সুগন্ধের ঘ্রাণে মাতোয়ারা সংখ্যালঘু নেতাদের ফাঁদে পা না দিয়ে বেসরকারী মাদ্রাসার প্রতি যত্নশীল হওয়া সময়ের দাবি । এতে একদিকে মুসলিম সমাজ বড় ধরনের ধোকা থেকে বাচবে অন্যদিকে দ্বীনের খিদমতে সংযোজিত হবে আরও নতুন নতুন তরুণ ক্বাফেলা।
লেখক : ফয়ছল আহমদ
1 comment:
ধন্যবাদ ফয়ছল ভাই
এগিয়ে চলুন.......
Post a Comment