মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের বিলুপ্তিঃ আসামের মুসলিম নেতৃবৃন্দ নীরব কেন? - Barak Bangla News

Breaking

Jul 5, 2017

মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের বিলুপ্তিঃ আসামের মুসলিম নেতৃবৃন্দ নীরব কেন?


গত ১ জুলাই তারিখে আসাম সরকারের এক নির্দেশ মর্মে রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষা-দপ্তর বিলুপ্ত করা হয়। এখন থেকে মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য আলাদা কোনো সঞ্চালকালোয় থাকবে না, থাকবে না আলাদা কোনো শিক্ষা পর্ষদ। মাদ্রাসার যাবতীয় কাজকর্মসহ সকল কর্মচারীবৃন্দকে মাধ্যমিক শিক্ষার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। সুতরাং আসামের সরকারি মাদ্রাসাগুলো যে আর মুসলমানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে থাকছে না তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা স্বাধীনোত্তর আসামের মুসলমানদের সবচেয়ে বড় লোকসান হিসাবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। অথচ এমন পরিস্থিতিতেও রাজ্যের মুসলিম নেতৃবৃন্দ সাক্ষী গোপালের ভূমিকা পালন করছেন।


বলতে দ্বিধা নেই যে, ইদানীং আসাম রাজ্যে হিটলারি কায়দায় মুসলমানদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা মোকাবিলা করা রাজ্যবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর উচ্ছেদ অভিযান, গুলি বর্ষণ ইত্যাদি নিষ্ঠুর রসিকতা তথা সৈরাচারী শাসনের নমুনা দেখে ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রে বিশ্বাসীরা স্তম্ভিত হচ্ছেন। বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের একের পর এক হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে আসামের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, সাম্প্রদায়িক কলহ আসামের ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। নেলীর গণহত্যা, কোকরাঝাড়ে বড়ো-সন্ত্রাসের আগ্রাসন, বাংলাদেশী বিতাড়নের নামে উগ্র অসমীয়াদের সশস্ত্র পাশবিক নির্যাতন ইত্যাদি অনেক কিছু আসামের সংখ্যালঘু মুসলমানদের অতীত ইতিহাসে বিদ্যমান রয়েছে। তবে এসব হত্যালীলা বিদেশি বিতাড়নের নামে সংগঠিত হয়েছিল বৈ এখানে কখনো ইসলাম ধর্মকে নিশানা বানানো হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর একদিকে আসামের মুসলমানদের অস্তিত্ব নির্মূল করার জন্য করা বিভিন্ন ধরণের বৈষম্য মূলক নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে । অন্যদিকে আসাম থেকে ইসলামী সভ্যতা-সংস্কৃতি নির্মূল করার উদ্দেশ্যে মুসলমানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর বিজেপি সরকারের বদ-নজর পড়েছে। তাই রাজ্যের মুসলমানদের ভাবাবেগে আঘাত করত সরকারি মাদ্রাসাগুলোর সপ্তাহিক ছুটির দিন পরিবর্তনের পর এবার রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষার যাবতীয় কিছু মাধ্যমিক শিক্ষার সঙ্গে সংযুক্ত করে দিয়ে কার্যত এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করা হয়েছে ।
বলাবাহুল্য যে, ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যতিরেকে কোনোও অঞ্চলের মুসলমানদের জীবন দর্শন তথা জীবন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। সুতরাং পৃথিবীর যেখানেই মুসলমানরা রয়েছেন সেখানেই রয়েছে তাদের স্বতন্ত্র ধর্মীয় শিক্ষা-ব্যবস্থা। মুসলমানদের এই স্বতন্ত্র শিক্ষা ব্যবস্থাকে মাদ্রাসা শিক্ষা নামে আখ্যায়িত করা হয়। ভারতবর্ষে মুসলমানদের আগমনের পর থেকেই এখানে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রচলন ঘটে। এ দেশের সংবিধান সংখ্যালঘুদের একটি পূর্ণ অধিকার প্রদান করে যে, তারা তাদের নিজস্ব ভাষাগত ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পারে এবং একই সাথে কোনও বৈষম্য ছাড়াই গ্রান্ট-ইন-এইডের দাবিও করতে পারে। সেই হিসাবে ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা-গবেষণার উদ্দেশ্যে মুসলমানদের ওয়াকফ সম্পত্তিতে স্থাপিত আসামের মাদ্রাসাগুলোর সিংহ ভাগ এক সময় সরকারি সাহায্যের আওতায় চলে গিয়েছিল। পরবর্তীতে "The Assam Madrassa Education (provincialisation) Act, 1995 -এর অধীনে রাজ্যের সিনিয়র মাদ্রাসা, টাইটেল মাদ্রাসা এবং এরাবিক কলেজেগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি প্রাদেশিকীকরণ করা হয়। মাদ্রাসা শিক্ষা পরিচালনার জন্য আলাদা ভাবে সঞ্চালকালয়ও তৈরি করা হয়। তখন এই মাদ্রাসাগুলোকে রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলে সরকারি আইনে উল্লেখ রাখা হয় নি। তবে মাদ্রাসা বলতেই যেহেতু ইসলাম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কথা বোঝায়, তাই বিগত দিনে আসামের সরকারি মাদ্রাসাগুলোর ক্ষেত্রে মুসলমানদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে সরকার পক্ষের কোনো আপত্তি ছিল না। ফলে মাদ্রাসার মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি সুরক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভ করত মুসলমানরা সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করে আসছিলেন।
২০১১ সালে আসাম মাদ্রাসা বেঞ্চার প্রাদেশিকীকরণ আইনের অধীনে কতগুলো মাদ্রাসা প্রাদেশিকীকরণ লাভ করে। এতে প্রি-সিনিয়র নামক এম. ই. স্কুলের সম্পূর্ণ কোর্স-সিলেবাস সম্বলিত কতগুলো প্রতিষ্ঠান আসাম রাজ্যিক মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের অন্তর্ভুক্ত হয়। উল্লেখ্য, এর আগে মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে প্রি-সিনিও মাদ্রাসা নামে আলাদা কোন প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব ছিল না। সুতরাং এম. ই. স্কুল ধাঁচ
                                                                           Md Zamal Uddin

No comments: