কই আমিনা সম্পর্কে দু’টি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ আলাদা। একটি বিদেশি ট্রাইব্যুনালের চোখে সে খাঁটি ভারতীয়। কিছুদিন বাদে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল দাবী করল – না আমিনা খাতুন মোটেই ভারতীয় নয়। সে অবৈধ ভাবে ভারতে বাস করছে।দুঃখ ট্রাইব্যুনালের ভিন্ন নজরের ফাঁসে পড়ে নাভিশ্বাস উঠেছে আমিনার। তবে শুধু আমিনার নয়, বিভিন্ন মামলার শুনানি করতে গিয়ে বিদেশী ট্রাইব্যুনালগুলি যেভাবে অনেক ক্ষেত্রেই পরস্পর বিরোধী মত পোষণ করেছে, তা নিয়ে রাজ্যে বহুবার প্রশ্ন উঠেছে। বাস্তবে বিদেশী ট্রাইব্যুনালের কাজের ধরণ নিয়ে ওঠা বিভিন্ন প্রশ্নের বহু উত্তর এখনো অমীমাংসিত। এভাবে একই ব্যক্তিকে একাধিকবার বিদেশী ট্রাইব্যুনালের মতদ্বন্দের শিকার বিষয়টি এবার এসে পৌঁছেছে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর বেঞ্চে। নাগরিক হিসাবে প্রমাণিত বা বিদেশী ঘোষিত হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে, এমন ব্যক্তিদের কেন বারবার নাগরিকত্বের পরিচয় দিতে হবে, এই জিজ্ঞাসার ভিত্তিতে দায়ের করা মামলাটি গ্রহণ করে কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকারের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছে সুপ্রিমকোর্ট। আসামের বাসিন্দা স্বপন দত্তর দায়েরকৃত ওই মামলাটির শুনানি ছিল সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি কে এম যোশেফ ও বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তার বেঞ্চে।
একবার ভারতীয় হিসাবে নাগরিকত্ব প্রমাণ করার পরও একই ব্যক্তিকে আবার বিদেশী ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে, এমন নজর ভূরিভূরি। রাষ্ট্রের সন্দেহ হলেই কেন বারবার একই ব্যক্তিকে এভাবে টানাহেঁচড়া করা হবে তা নিয়ে আদালতের কাছে দিশানির্দেশ চেয়ে ওই মামলার (সিভিল লিভ পিটিশন, ডায়েরি নাম্বার ৩৬২৩৫/২০১৮) আইনজীবী কলিন গনজালভেস সুপ্রিমকোর্টকে জানান, সংকটে পড়া এমন বহু মানুষের হতদরিদ্র অবস্থা। তাদের পক্ষে আইনজীবী জোগাড় করা সম্ভব হয়না। মামলাটি দায়ের হয়েছে গৌহাটি হাইকোর্টের রায়কে চ্যলেঞ্জ জানিয়ে। গনজালভেস বলেছেন, সিভিল প্রসিজিওর কোডের ১১ নম্বর ধারায় যে রেস জুডিকাটার কথা বলা হয়েছে, তার ভাবাদর্শ আদালতের উপর প্রযোজ্য। আইনের ভাষায় রেস জুডিকাটার অর্থ হল, যে বিষয়ে আদালতের স্বতঃসিদ্ধান্ত হয়েছে তা নিয়ে এই ব্যক্তির সামনে ফের ওই বিষয়টি নিয়ে এগোনোর বিশেষ অবকাশ থাকে না। আইনজীবীরা মনে করছেন, এই তাৎপর্যপূর্ণ মামলাটি আইনের চোখে ‘ডবল জিওপার্ডি’ বলে কথিত বিষয়ের মূলে আঘাত করতে পারে। একই অপরাধে একই ব্যক্তিকে বারবার বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় না -ডবল জিওপার্ডির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় এটিই। গনজালভেস আদালতকে বলেন, যিনি একবার নির্দিষ্ট ঘটনায় বিদেশী বা ভারতীয় নাগরিক বলে প্রমানিত হয়েছেন, তাকে কেন আবারও একই বিষয়ে টেনে আনা হবে। ডাবল জিওপার্ডির ফলে একই অভিযোগে কোনো ব্যাক্তির বিরুদ্ধে বারবার বিচার হওয়া ঠিক নয়।
২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল বিদেশী ট্রাইব্যুনাল আমিনা খাতুনকে ভারতীয় নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। প্রায় বছরদেড়েক বাদে ঢেকিয়াজুলির বিদেশি ট্রাইব্যুনাল ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর আমিনাকে অবৈধ অভিবাসী ঘোষণা করে দেয়। আসামের এনআরসি মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং ‘ডি’ ভোটারের বিষয় নিয়ে ওয়াকিবহাল সুপ্রিমকোর্টের একাধিক আইনজীবী বলছেন, একই লোক ট্রাইব্যুনালের বৈধ নাগরিক প্রমাণিত হওয়ার পরেও আবার ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে অভিযোগের মুখে পড়েছেন, এমন উদাহরণ অনেক রয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ভোটার তালিকার ভিত্তিতে রাজ্য সরকার বিধানসভায় জানিয়েছে, ওই সময় পর্যন্ত মোট ৪ লক্ষ ৫৯ হাজার ৩৫৬টি মামলা বিদেশী ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে ২ লক্ষ ৮২ হাজার ২৯২টি কেসের নিষ্পত্তি হলেও সেই সময় পর্যন্ত ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালগুলিতে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ৯৬৪টি মামলা ঝুলে ছিল। বিদেশি ঘোষিত হয়েছেন ২১,৭৪৭ জন আর সন্দেহজনক তালিকা থেকে মুক্তি পেয়েছেন ৬৭,৮৪০জন।
No comments:
Post a Comment