খসড়া-ছুট যাঁরা পুনরাবেদন দাখিল করবেন না স্বাভাবিক ভাবেই সেই সব লোকের নাম বাদ পড়বে চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জী থেকে। কিন্তু চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জীতে যাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত হবে না, তাঁদের ভোটাধিকারের কেড়ে নেওয়ার পথেই এগোচ্ছে কেন্দ্র। চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জী প্রকাশের পরপরই সেই ব্যবস্থা কার্যকরী হতে পারে। ইতিমধ্যেই এই ইঙ্গিত দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই সেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অবশ্য নাগরিকপঞ্জীতে শনাক্ত বিদেশিদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয় বলে তাদের ওর্য়াক পারমিট দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে কেন্দ্রের। কিন্তু সেটা দীর্ঘ মেয়াদী সরকারি পদক্ষেপ।
তবে ‘বিদেশি’ হিসাবে রাজ্যের বড়ো অংশের ভোটাধিকার হারানোর মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তখন মূখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল আজ নাগরিকপঞ্জী নবায়ান্যো কৃতিত্ব দাবি করেছেন। সরকার কিছু লুকিয়ে করবেন না, সবাইকে অবস্থায় নিয়ে কাছ করছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নাগরিকপঞ্জীর বিরুদ্ধে দেশ, বিদেশে অপপ্রচার করে বীতির সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু দৃঢ়তার সঙ্গে সরকার নাগরিকপঞ্জীর কাজে সহযোগিতা করার ফলেই খসড়া প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে।
সরকার জাতীয় দায়িত্ব পালন করায় আজ এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে নাগরিকপঞ্জীর নবায়ন।’ সাধরণ মানুষকে অভয় দিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘কেউ ভয় পাবেন না। কোনও কাজ লুকিয়ে করে না সরকার। গত আড়াই বছর ধরে তিন কোটি ত্রিশ লক্ষ মানুষকে আস্থায় নিয়েই সরকার কাজ করছে। মানুষের মন থেকে ভয় ভীতি দূর করার কাজ করে যাচ্ছে।’ সোমবার গুয়াহাটিতে প্রদেশ বিজেপির সদর কার্যালয়ে আয়োজিত শহিদ দিবসের এক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন মূখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু নাগরিকপঞ্জী থেকে যাদের নাম বাদ পড়বে, তাঁদের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে অশেষ দুর্গতি, সেটা রবিবার পরিষ্কার হয়ে গেছে। দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পক্ষ থেকে একাংশ সাংবাদিককে ডেকে নিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, খসড়া-ছুটদের নিয়ে সরকারের অভিপ্রায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, যদি কেউ উপযুক্ত নথিপত্র দাখিল করে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারেন, তাহলে সেই ব্যক্তির ভোটাধিকার হরণ করাই হতে পারে কেন্দ্রের প্রথম পদক্ষেপ। তবে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্ববধানে যখন আসামে নাগরিকপঞ্জীর কাজ চলছে, তাই শনাক্ত বিদেশিদের ব্যাপারেও চূড়ান্ত কোনও নির্দেশ জারি করতে পারে আদালত। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার সুপারিশ করবে, সেটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন ওই কর্তা। রাজ্য সরকার সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে কেন্দ্র।
গত জুলাইয়ে প্রকাশিত নাগরিকপঞ্জীর খসড়া থেকে বাদ পড়েছেন ৪০ লক্ষের বেশি লোক। কিন্তু তাঁদের মধ্যে মাত্র দশ লক্ষের কাছাকাছি লোক পুনরাবেদন দাখিল করেছেন। অথচ আগামী ১৫ই ডিসেম্বর শেষ হতে যাচ্ছে দাবি-আপত্তি পর্ব। সুপ্রিম কোর্টে কে সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করেছে কিন্তু আদলত সাড়া না দিলে সে দিনই শেষ হয়ে যাবে পুনরদাখিলের সুযোগ। তাই এরমধ্যে পুনরদাখিল না করতে পারলে খসড়া-ছুট প্রায় ২৫-৩০ লক্ষ লোক সন্দেহভাজন বিদেশি বলে চিহ্নিত হবেন। চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জীতেও তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত হবে না। নাগরিকপঞ্জীতে অন্তর্ভুক্ত না হলেও সেই সব লোকদের কাছে নিজেদের ভারতীয় বলে প্রমাণের সুযোগ থাকবে। নাগরিকপঞ্জী কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে বিদেশি ট্রাইবুনাল আবেদন করার সুযোগ পাবেন নাগরিকপঞ্জী-ছুটরা। বিদেশী ট্রাইবুনালের সিদ্ধান্ত বিপক্ষে গেলে তাঁদের কাছে হাইকোর্ট কিংবা পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সুযোগও থাকবে।
কিন্তু বিদেশী ট্রাইবুনাল কিংবা পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও তার আগেই নাগরিকপঞ্জী-ছুটদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার পক্ষপাতী কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করে, নাগরিকপঞ্জী প্রক্রিয়ায় নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছেন। তারপরও কেউ যদি উপযুক্ত নথিপত্র পেশ করেনাগরিকপঞ্জীতে নিজের নাম না তুলতে পারেন, তারমানে সেই ব্যক্তির কাছে নথিপত্র নেয়। ফলে বিদেশি বলে তাঁকে সন্দেহ করার যথেষ্ট যুক্তি থাকবে। তাছাড়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য যে পদ্ধতিতে এবং ব্যাপক অবস্থায় নাগরিকপঞ্জী নবায়ান করা হচ্ছে আসামে। সূত্র: দৈনিক যুগশঙ্খ।
No comments:
Post a Comment