আফরাজুল খান মালদার কালিয়াচকের বাসিন্দা। কাজের সন্ধানে গিয়েছিলেন রাজস্থান। বছরের পর বছর সেখান থেকে অর্থ কামিয়ে সংসার চালিয়ে ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের পর দেশে রাজনৈতিক পালাবদল হয়। শুরু হয় মেরুকরণের ঘৃণ্য রাজনীতি আর সাম্প্রদায়িকতা। আইন হাতে তুলে নিয়ে শুরু হয় গোরক্ষকদের তাণ্ডব। তার প্রভাব থেকে রক্ষা পায়নি রাজস্থানও।
বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর সেখানেও হিংসা খুন সাম্প্রদায়িকতা বাড়তে থাকে। ফলস্বরূপ একজন নিরীহ শ্রমিকের ওপর তাণ্ডব চালায় উগ্রপন্থী শম্ভুলাল। গতবছর আফরাজুলের উপর বর্বর আক্রমণ হয়। শম্ভুলাল রেগার নামে একজন উগ্রপন্থী লাভ জিহাদের নাম করে কুপিয়ে-পুড়িয়ে খুন করে বাংলার শ্রমিককে। সেই বীভৎস ভয়ংকর ভিডিও দেখে আঁতকে ওঠে গোটা ভারত।
পরে জানা গেছে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক কারণে আফরাজুলকে খুন করেছে শম্ভুলাল। আজও মালদার কালিয়াচকে আফরাজুলের মেয়েগুলি বাবা বাবা করে কাঁদে। তার পরিবারকে নিয়ে রাজনীতি কম হয়নি। আফরাজুলের পরিবার কি ন্যায়বিচার পাবে? সে প্রশ্ন কিন্তু বারবারই উঠেছে। আফরাজুলের স্ত্রী গুলনাহার বিবি টিডিএন বাংলার মাধ্যমে বারবার খুনি শম্ভুলালের ফাঁসির দাবি করেছেন। অবলা অশিক্ষিত পরিবার আইনি লড়াই কতটা করতে পারবে সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
আফরাজুলের খুনির বিচার কবে হবে তা কেউ জানে না। কিন্তু মঙ্গলবার রাজস্থানের নির্বাচনে মানুষ যেভাবে ভোট দিয়ে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে তা এক ঐতিহাসিক ঘটনা। ২০১৯ এর ফাইনালের আগে এই সেমিফাইনালটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আফরাজুলের পরিবার থেকে নাগরিক সমাজ বলছেন, রাজস্থানে বিজেপির পরাজয় আফরাজুলের খুনের পরের দিন থেকেই শুরু হয়েছে।
সে রাজ্যে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে মানুষ ভয় করেছে। নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছিল সাধারণ মানুষের জীবন। প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে কাটাতে হয়েছিল দিন। এখনো সেই আতঙ্কের মধ্য দিয়েই কাটছে রাজস্থান। আইন হাতে তুলে নিয়েছে এক শ্রেণীর গেরুয়া।
সামান্য হলেও সুখের খবর এই আফরাজুল কাণ্ডের পর রাজস্থানে বিজেপির ভরাডুবি একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। দেশবাসী চাইছে শুধুমাত্র ২০১৮ নির্বাচন নয়,২০১৯ -র নির্বাচনে গোটা ভারত থেকে গোটা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিতে।
সামান্য হলেও সুখের খবর এই আফরাজুল কাণ্ডের পর রাজস্থানে বিজেপির ভরাডুবি একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। দেশবাসী চাইছে শুধুমাত্র ২০১৮ নির্বাচন নয়,২০১৯ -র নির্বাচনে গোটা ভারত থেকে গোটা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিতে।
ভারতের যে স্বাধীনতা,যে সার্বভৌমিকতা যে সাংবিধানিক ঐতিহ্য আছে তাকে রক্ষা করতে হলে এদেশের মাটি থেকে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে হঠাতেই হবে। সকল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ কে এগিয়ে আসতে হবে। এদেশে একটি আসনও যেন বিভেদকামী শক্তিরা আর না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। কেননা আগামী দিনে আমরা চাই না আর আফরাজুলের মত কেউ খুন হোক। আমরা চাই না জুনায়েদ, রোহিত ভেমুলা আর নাজিবের মায়ের আর্তনাদ শুনতে। আমরা চাই না গৌরী লঙ্কেশ এর মত ঘটনা। আমরা চাই না বাংলা সহ গোটা ভারতে গোরক্ষকদের তান্ডব।
আমরা চাই আগামী প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর দেশ। যে দেশের নাগরিকরা স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে দেশকে দেবে সুনেতৃত্ব। আমরা চাই সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকুক প্রতিটি নাগরিক। আফরাজুলের বিচার কবে হবে তা ভবিষ্যৎ বললেও আজকের এই রায়ের পর আফরাজুলের পরিবার স্বভাবতই একটু হলেও খুশি। রাজস্থানে বিজেপির বিরুদ্ধে যে রায় হয়েছে তা আরও ব্যাপক হলে ভালো হত।
তারপরেও স্বৈরতান্ত্রিক সমগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তিকেও যে মানুষ পরাস্ত করতে পারে আজকের পাঁচ রাজ্যের ফলাফল তারই প্রমাণ। এদেশ সাম্প্রদায়িকতার দেশ নয়। শান্তি সৌহার্দ্য ভালোবাসার মন্ত্র নিয়ে এদেশের নওজওয়ানরা একটা সুন্দর ভারতবর্ষ গড়ে তুলবে যে দেশে হাজারো আফরাজুল থাকবে, জুনায়েদ থাকবে, রোহিত ভেমুলা, গৌরী লঙ্কেশরা থাকবে, কানামাঝিরা থাকবে। সেখানে ধৰ্ম থাকবে কিন্তু ধর্মীয় উন্মাদনা থাকবে না। মানুষ এখানে মুক্তির উল্লাসে হাসবে।
No comments:
Post a Comment