ইদানিং অনলাইন বুদ্ধিজীবিদের বাড়বাড়ন্ত কিছুটা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে ফেসবুক সহ অন্যান্য মুক্ত সামাজিক মাধ্যমে। বুদ্ধির যেন মুক্ত বাজার! যতই জটিল সমস্যা হোক না কেন এরা মূহুর্তের মধ্যে চট করে সমাধান দিতে পারেন । তাও একশো শতাংশ বিনামূল্যে!
গতকাল থেকে 'তাৎক্ষণিক তিন তালাক' সম্পর্কিত সর্বোচ্চ আদালতের রায় নিয়ে নিজেদের মতামতের পাশাপাশি যেভাবে লাগাতার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়ে যাচ্ছেন তা নিছক হাস্যকর ছেলেখেলা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।
কারণ যুগ যুগ ধরে ইসলাম বিশেষজ্ঞদের (মুজতাহিদ ) পক্ষেও স্পর্শকাতর 'তাৎক্ষণিক তিন তালাক' প্রয়োগের ফলে তালাক পতিত হবে কি না এ ব্যাপারে এক মত হয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব হয় নি। এমনকি মূখ্য বিচারপতির নেতৃত্বে মহামান্য সর্বোচ্চ আদালতের পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট বিচারপতিদের ব্যাঞ্চেও এক হয়ে রায় ঘোষণা করতে পারে নি। যেখানে পাঁচ সদস্যের মধ্যে দুই সদস্য এই রায়ের বিরুদ্ধে রয়েছেন ।এদিকে আদালতও চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি বরং ছয় মাসের জন্য এই প্রক্রিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে । আর আমরা... ! ৩৯৫ পৃষ্ঠার রায়কে ভালভাবে অধ্যয়ন করার পরিবর্তে জোকারবার্গের বৈশ্বিক এ মাঠে শুধু মতামতের হিড়ীক আরম্ভ হয়নি বরং অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ ভাষায় দেশের বিশেষজ্ঞ উলামাদেরকে কাঠগড়ায় তুলা হয়েছে। এই তথাকথিত আধুনিক ও স্বঘোষিত আইনজ্ঞদের হাত থেকে বাচতে পারেননি সর্ব ভারতীয় মুসলিম পার্সোনাল ল' বোর্ডের কর্ণধার উলামায়ে কেরামরাও, যা চরম নিন্দাজনক । অবশ্য এতে মোটেই ক্ষিপ্ত নন দেশের উলামায়ে কেরামরা। তাদেরকে স্বার্থপর বিক্রি হওয়া মিডিয়া সহ নিন্দুকদের নিন্দায় ধৈর্যহারা হতে দেখা যায় নি বরং বিষয়টি ভালো ভাবে পর্যালোচনা করে ল' বোর্ডের সভায় সর্ব সম্মতি ক্রমে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে মত ব্যক্ত করে বীরত্বের প্রমাণ দিয়েছেন দেশের প্রথম সারির উলামারা । আর কেনই এমন করবেন না? আজকের এইসব উলামারা তো সেই শাহ ওলিউল্লাহ, শাহ আব্দুল আজিজ, তানবী, নানুতবী, গঙ্গোহী, খয়রাবাদী, আজাদ, ও জওহরের উত্তরসুরি । যারা শরীয়তে মুহাম্মদীতে মোদী সরকার নয় বৃটিশ সরকারেরও হস্তক্ষেপ সমর্থন করেন নি । তারা সেই ৫৭০০০ উলামায়ে কেরামের উত্তরসুরি যারা শরীয়ত, জাতি ও দেশ রক্ষার জন্য কালাপানি, আন্দামান, মাল্টার মেহমান হওয়ার পাশাপাশি গলায় দড়ি দিতেও দ্বিধা বোধ করেন নি। তারা সেই সব ইতিহাসের পণ্ডিত যেসব ইতিহাসের পাতায় পাতায় স্বার্থ, চেয়ার ও পরিচিতর লোভে নিজ দেশেও বৃটিশের প্রতিনিদিত্ব করা এমন শত শত গাদ্দারদের নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে ।
সর্বোপরি একসঙ্গে তিন তালাক শরীয়তে মুহাম্মদী কোনদিও সমর্থন করেনি বরং নিষিদ্ধ করেছে কঠোর ভাবে । কিন্তু কঠোরতা থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ এমন নিকৃষ্টতম কর্ম করে ফেলে তখন এক বড় সংখ্যক বিশেষজ্ঞদের মতে তালাক পতিত হয়ে যাবে। মোটকথা 'সাপ শুধু যায় নি বরং পথও পড়ার সম্ভাবনা'।
লেখক : মুহা: ফয়ছল আহমদ, রাতাবাড়ী
No comments:
Post a Comment