'তিন তালাক' এবং 'একসাথে তিন তালাক' কথা দু'টি দুই ভিন্ন ভিন্ন প্রসঙ্গ। - Barak Bangla News

Breaking

Aug 22, 2017

'তিন তালাক' এবং 'একসাথে তিন তালাক' কথা দু'টি দুই ভিন্ন ভিন্ন প্রসঙ্গ।

(i) 'তিন তালাক' এবং (ii) 'একসাথে তিন তালাক'  কথা দু'টি দুই ভিন্ন ভিন্ন প্রসঙ্গ। ভারতের মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট উল্লেখিত দ্বিতীয় প্রসঙ্গে রায় দান করেছেন। অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী একসাথে তিন তালাকের সাংবিধানিক বৈধতা নেই। এদিকে ইসলামী শরিয়তে 'একসাথে তিন তালাক' প্রয়োগ করাকে 'বিদআত' পর্যায়ের গোনাহ (বা অবৈধ) বলা হয়েছে। অতএব, "একসাথে তিন তালাকের  বৈধতা নেই"  বলে সাংবিধানিক ভাবে 'ফতোয়া' জারি করা হলে তা বাহ্যিক দৃষ্টিতে ইসলামী শরিয়তের সাথে বিরোধপূর্ণ নয়। কিন্তু কথা হচ্ছে যে, কেউ শরিয়ত এবং সংবিধান উভয়টিকে তোয়াক্কা না-করে তার স্ত্রীকে 'একসাথে তিন তালাক' দিয়ে দিলে তালাকগুলো উক্ত স্ত্রীর উপর পতিত হবে কি-না ? এই ব্যাপারটি মুসলমানদের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়।

উল্লেখ্য, একসাথে তিন তালাক প্রয়োগ করা শরিয়ত অনুযায়ী তালাকের বিশুদ্ধ পদ্ধতি নয়। তথাপি কেউ এভাবে তালাক দিলে সে শরিয়তের সীমা লঙ্ঘনকারী হিসাবে আল্লাহর দরবারে অপরাধী হবে। তবে হাদিস শরিফসহ অন্যান্য অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে উক্ত তালাক স্ত্রীর উপর পতিত হয়ে যায়। সুন্নী সম্প্রদায়ভুক্ত মুসলমানদের কোনোও মতবাদে এব্যাপারে দ্বিমত নেই। অবশ্য এধরণের তালাক (একত্রিত তিন তালাক বা একই বৈঠকে তিন তালাক) দেওয়া হলে তা কয় তালাক হিসাবে গণ্য হবে এব্যাপারে সমকালীন মুসলিম বিশ্বের একাংশ উলামাদের দ্বিমত রয়েছে। তবে প্রাধান্যপ্রাপ্ত হাদিসের বিবরণ অনুযায়ী এ ধরণের  তালাক  তিন তালাক হিসাবেই পতিত হয়। এ ব্যাপারে সাহাবায় কেরামসহ পরবর্তী যুগের উলামাদের বৃহত্তম দল তথা প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ইমামগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন। তবে পরবর্তী যুগের উলামাদের মধ্যে ইমাম ইবনে তাইমীয়া, ইবনে কায়্যিম প্রমুখ উলামারা নবী (সঃ) তথা সাহাবাদের যুগ থেকে অবিচ্ছিন্ন ধারায়  মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তম দলের অনুসৃত  নীতির বিপক্ষে একত্রিত তিন তালাককে এক তালাক হিসাবে গণ্য করার জন্য মতামত ব্যক্ত করেছেন । তবুও তাঁরা কেউ 'একসাথে তিন তালাক'  দ্বারা তালাক পতিত হয় না বলে দাবী করেন নি।

সংক্ষেপে, একসাথে তিন তালাক প্রসঙ্গে দু'টি কথা রয়েছে। প্রথমতঃ এভাবে তালাক দেওয়াকে পবিত্র শরিয়তে অবৈধ বলা হয়েছে। ফলে এই প্রথাকে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেওয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। দ্বিতীয়তঃ শরিয়তের অবৈধ কোন পদ্ধতিতে তালাক প্রয়োগ করা হলে তা কার্যকর হবে কি-না এব্যাপারে একমাত্র ইসলামী শরিয়ত ব্যতীত অন্য কারো নাক-গলানোর অধিকার নেই। অথচ এমন ব্যাপারে মুসলমানরা একমাত্র শরিয়তি বিধান  ছাড়া অন্য কিছু মেনে চলতে বাধ্য নয়।

লেখক : মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন, রাতাবাড়ি ।

No comments: